সূরা আল ফাতিহা পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ৭ এবং রুকু সংখ্যা ১। ফাতিহা শব্দটি আরবি “ফাতহুন” শব্দজাত যার অর্থ “উন্মুক্তকরণ”। এটি মক্কায় অবতীর্ণ ১ম ও পূর্ণাঙ্গ সূরা। এতে ৭টি আয়াত, ২৫টি শব্দ এবং ১১৩টি হরফ বা বর্ণ রয়েছে।
সূরা আল ফাতিহা’র বাংলা উচ্চারণ:
বিসমিল্লাহির রাহমা-নির রাহি-ম। আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’-লামি-ন। আররাহমা-নির রাহি-ম। মা-লিকি ইয়াওমিদ্দি-ন। ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাসতাই’-ন। ইহদিনাস সিরাতা’ল মুসতাকি’-ম। সিরাতা’ল্লা যি-না আনআ’মতা আ’লাইহিম গা’ইরিল মাগ’দু’বি আ’লাইহিম ওয়ালা দ্দ—ল্লি-ন।
সুরা ফাতিহার উচ্চারণ ও অনুবাদ:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য। যিনি সব সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।
الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ
যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।
مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ
যিনি বিচার দিনের মালিক।
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধু তোমারই সাহায্য চাই।
اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ
আমাদেরকে সরল পথ দেখাও,
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ
সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
সূরা ফাতিহা’র বৈশিষ্ট্য:
- সূরা ফাতিহা কুরআনের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ সূরা। তাওরাত, জবুর, ইনজিল, এমনকি পবিত্র কোরআনেও এই সূরার তুলনীয় কোন সূরা নেই। (বুখারি, মিশকাত : ২১৪২)
- সূরা আল ফাতিহা এবং সূরায়ে বাকারা’র শেষ তিনটি আয়াত হল আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত বিশেষ নূর, যা ইতিপূর্বে কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। (মুসলিম শরীফ : ৮০৬)
- যে ব্যক্তি নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করল না, তার ছালাত অপূর্ণাঙ্গ। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ কথাটি তিনবার বললেন। (মিশকাত : ৮২৩)
- আবু সা‘ঈদ খুদরী রা. বলেন, একবার এক সফরে আমাদের এক সাথী জনৈক গোত্রপতিকে শুধুমাত্র সূরায়ে ফাতিহা পড়ে ফুঁ দিয়ে সাপের বিষ ঝাড়েন এবং তিনি সুস্থ হন। (বুখারি শরীফ : ৫৪০৫)
সুরা ফাতিহার বিশেষ মর্যাদা হলো, আল্লাহ এটিকে নিজের ও নিজের বান্দার মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন। একে বাদ দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব নয়। সেজন্যই এর নাম দেয়া হয়েছে ‘উম্মুল কুরআন’। পবিত্র কুরআন মূলত তিনটি বিষয়ে বিন্যস্ত। তাওহীদ, আহকাম ও নছীহত। সূরায়ে ইখলাছে ‘তাওহীদ’ পূর্ণাঙ্গভাবে থাকার কারণে তা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু সূরায়ে ফাতিহায় তিনটি বিষয় একত্রে থাকার কারণে তা ‘উম্মুল কুরআন’ হওয়ার মহত্তম মর্যাদা লাভে ধন্য হয়েছে। (তাফসীরে কুরতুবী : ১৪৮)
সূরা ফাতিহা’র ফজিলত:
সুরা ফাতিহার ফজিলত অপরিসীম। এর ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ:
- আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা সূরা ফাতিহা পড়। কোন বান্দা যখন বলে, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। যখন বলে, আর-রহমা-নির রহীম, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুন বর্ণনা করেছে। বান্দা যখন বলে, মালিকি ইয়াউমিদ্দীন। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। বান্দা যখন বলে,ইয়্যাকানা’বুদু ওয়া ইয়্যা কানাস্তাইন, আল্লাহ বলেন, এ হচ্ছে আমার ও আমার বান্দার মাঝের কথা। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। বান্দা যখন বলে, ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম.. (শেষ পর্যন্ত)। আল্লাহ বলেন, এসব হচ্ছে আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। (মুসলিম শরীফ : ৩৯৫)
- ইবনে আববাস (রা.) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে জিবরাঈল (আ.) উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ জিবরাঈল (আ.) ওপর দিকে এক শব্দ শুনতে পেলেন এবং চোখ আকাশের দিকে করে বললেন, এ হচ্ছে আকাশের একটি দরজা যা পূর্বে কোনদিন খোলা হয়নি। যে দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে বললেন, ‘আপনি দু’টি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন যা আপনাকে প্রদান করা হয়েছে এবং আপনার পূর্বে কোন নবীকে প্রদান করা হয়নি। তা হচ্ছে সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাকারার শেষ দু’আয়াত।’ (মুসলিম শরীফ : ৮০৬)
- উবাই ইবনু কা’ব (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ উম্মুল কুরআনের মত তাওরাত ও ইনজিলে কিছু নাজিল করেননি। এটিকেই বলা হয়, ‘আস-সাবউল মাছানী’ (বারবার পঠিত সাতটি আয়াত), যাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। আর আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, সে যা চাইবে’। (নাসায়ী শরীফ : ৩১৯)
আল্লাহ যেন আমাদের সকলকেই সূরা ফাতিহা’র প্রতি আমল করে সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফীক দান করেন। আমীন।
সূরা আল-ফাতিহা অডিও: